সিলেট সিটিতে হার্ডলাইনে আওয়ামী লীগ
সিলেটের ভোটে ‘ম্যারাডোনা’ বলা হতো সাবেক মেয়র কামরানকে। আর বর্তমান মেয়র আরিফ হচ্ছেন ‘মেসি’। ফুটবল বিশ্বে সাড়া জাগানো আর্জেন্টাইন দুই তারকা ফুটবলারের নাম ঘুরেফিরে সিলেটের নির্বাচনে আলোচিত হতো। কিন্তু সিটির ভোটে ম্যারাডোনা কিংবা মেসি যুগের আপাতত অবসান হয়েছে। এবার সিলেট সিটিতে নতুনরা নেমেছেন ভোটের লড়াইয়ে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল। তীব্র গতি নিয়ে এবার সিলেটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার। মাঠও সাজানো হয়ে গেছে।
এরপরও সিটি নির্বাচন নিয়ে শঙ্কামুক্ত নয় আওয়ামী লীগ। শেষের দিকে এসেছে হার্ডলাইনে সবাই। জয় চাই-ই চাই এ পণ নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ভোটের মাঠে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘরে ঘরে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলের নেতারা জানান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় ঘরে তুলতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
এ কারণে দীর্ঘ এক দশক ধরে নগর ভবনের মসনদ তাদের হাতছাড়া। এবার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও যোগ্য। মাঠেও সব নেতাকর্মীরা। পা পিছলে গেলে আওয়ামী লীগের সিলেটের ভোট ব্যাংকের হিসাব এলোমেলো হয়ে যাবে। সিলেটে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে দলটি। এজন্য সিটি নির্বাচনে জয় ছাড়া কিছু ভাবছে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক মাসুক উদ্দিন আহমদ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানান, ‘সিলেট সিটিতে এবার জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করেনি আওয়ামী লীগ। এই বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে গেছে। সবাই নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এটি হচ্ছে আমাদের প্লাস পয়েন্ট।’ তিনি বলেন, ‘সিলেট সিটির নির্বাচনে নৌকার জয়ের বিষয়ে আমাদের তেমন কোনো আশঙ্কাও নেই। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অনেকাংশে দুর্বল। আর বিএনপিসহ বিরোধী জোটের সব ভোটার কেন্দ্রে নাও যেতে পারে। ছিটেফোঁটা কিছু গেলে আমাদের জয়ের বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। নিরপেক্ষ ভোটেই আওয়ামী লীগ জয় ঘরে তুলতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।’
আরেক সমন্বয়ক সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীও জানান- ‘শতভাগ তো কেউ-ই বলতে পারবে না, আমরা ৯৯ ভাগ আশাবাদী জয় হবেই। প্রচার-প্রচারণায় ভালো হয়েছে। এবারের মতো অতীতের সিটি নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়নি। এবার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতারা এক হয়েছেন। তৃণমূলের নেতারা একেক ভোটারের কাছে ৪-৫ বার পর্যন্ত গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘তবু আমরা সতর্ক।
ভোটে যাতে কোনো অঘটন না ঘটে সেজন্য আমরা ভোটের মাঠ পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সিটি নির্বাচনের ভোট জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য করতে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর।’ এদিকে শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ঠেকছে না বলে জানান জাতীয় পার্টির নেতারা। প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলও নানা আশঙ্কার কথা জানান। তার মতে; ভোটের মাঠে নানাভাবে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। তার কর্মী ও সমর্থকদের ওপর চোখ রাঙানি চলছে। বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীদেরও নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
এতে করে ভোটের নিরপেক্ষ মাঠ নেই বলে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া সিলেট এমসি কলেজ ও সরকারি কলেজের হোস্টেল নিয়ে আশঙ্কার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ওই দু’টি হোস্টেলে বহিরাগতদের এনে রাখা হচ্ছে। এতে করে নির্বাচনের মাঠে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী জানানে, ‘শুরু থেকে আমরা নানা আশঙ্কার কথা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু শেষ দিকে আমরা আশঙ্কামুক্ত হতে পারিনি। বরং পরিবেশ পরিস্থিতি কঠিন হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ যেমনি ভালো নয়, আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যও ভালো নয়। তারা ভোট দেখাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কতোটুকু নিরপেক্ষ করছে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। ভোটের মাঠে থাকা জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতাদের থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদেরও সরানোর পাঁয়তারা চলছে। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে তো আর নির্বাচনের প্রয়োজন ছিল না। এখনো সময় আছে; নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।’