অর্থ ও বানিজ্যজাতীয়

চলতি বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪৩২ শ্রমিক

এ বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৯৬৭ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশনের করা এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে জরিপের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম মোর্শেদ। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ঘটনাও বেড়েছে। গত বছর আহত হয়েছিলেন ২২৮ জন। আর চলতি বছরে আহত হয়েছেন ৫০২ জন। ১৫টি সংবাদপত্র ও ওশির উদ্যোগে মাঠপর্যায় থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয় বলেও জানান ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম মোর্শেদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১ হাজার ১০৩ জন অপ্রাতিষ্ঠানিক ও ৩২৯ জন প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দিনমজুর খাতে ২২০ জন, নির্মাণ খাতে ১৪৯ জন, কৃষি খাতে ১৪৬ জন, উৎপাদন খাতে ৯৪ জন, পোশাক খাতে ৬৪ জন, মৎস৵ খাতে ৫৩ জন, সেবা খাতে ২৬ জন, সিরামিক খাতে ১৭ জন এবং অন্যান্য খাতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ওশি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে অন্তত ৯ হাজার ২৬৩ জন নিহত হয়েছেন।

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বাড়ছে উল্লেখ করে ওশি ফাউন্ডেশন বলছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এ উল্লেখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট নির্দেশনার যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং প্রশিক্ষণবিহীন চালক নিয়োগের ফলে পরিবহন খাতে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। এ ছাড়া জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগের অভাব, অপর্যাপ্ত শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত বয়লার পরিদর্শন ব্যবস্থা, গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহারে অনীহার কারণেও দুর্ঘটনার ঘটনাগুলো বাড়ছে।

কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুরোধে ১০টি সুপারিশ করেছে ওশি ফাউন্ডেশন। এগুলো হলো ১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এ উল্লেখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা; ২. পোশাক খাতের মতো অন্যান্য সেক্টরেও শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেফটি কমিটি গঠন; ৩. কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা ও আহত শ্রমিককে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা। এ ছাড়া আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা; ৪. শিল্প খাতের সব সেক্টরে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) চালু করা; ৫. সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা–সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডেটাবেজ তৈরি করা; ৬. কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া; ৭. শিপব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা; ৮. কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা; ৯. শিল্পমালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা, ২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা এবং ১০. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো।

আরও সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker