বিশ্বকাপে নিজের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণ জানালেন সাকিব নিজেই
ভারত বিশ্বকাপের পর্দা নেমেছে এক মাসেরও বেশি সময় আগে। যেখানে টানা হারে ক্ষত-বিক্ষত টাইগাররা বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। ব্যর্থ বিশ্বকাপ শেষে টেস্ট আর ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এলেও এখন পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে টাইগারদের বিশ্বকাপ ব্যর্থতা। ইতোমধ্যে সেই ব্যর্থতার জন্য তদন্ত কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে যাদের কাজ বিশ্বকাপের ব্যর্থতা খুঁজে বের করা।
তবে বৈশ্বিক এ আসরে যাওয়ার ঠিক আগে অনেকটা নাটকীয়ভাবে দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কাঁধে। এরপর দল ঘোষণা থেকে শুরু করে তাকে নিয়ে নানান বিতর্ক থাকলেও সকলের বিশ্বাস ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপের মত আরেকটি অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখাবেন সুপার সাকিব।
কিন্তু সমর্থকদের সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন সাকিব। উল্টো ইনজুরির কারণে শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে পারেননি তিনি। বরং সবার আগে দেশে ফেরেন টাইগার অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে এবারের বিশ্বকাপে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন টাইগার কাপ্তান। এরপর মিডিয়ার সামনে আর দেখা যায়নি সাকিবকে। কথা বলেননি বিশ্বকাপের ব্যর্থতা নিয়েও। অবশেষে লম্বা সময় পর বৈশ্বিক আসরের ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি।
বর্তমানে ব্যাট-প্যাড গুছিয়ে পুরো দমে রাজনীতিবিদ হওয়ার দৌড়ে মাঠে রয়েছেন সাকিব। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি মাগুরা-১ আসন থেকে দাড়িয়েছেন। এই মুহূর্তে নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। এরইমাঝে ভারতের ক্রীড়া বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের মুখোমুখি হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সেখানেই তিনি জানিয়েছেন বিশ্বকাপে ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে। কথা বলেছেন আরও অনেক বিষয় নিয়েও।
সংবাদমাধ্যমটিকে সাকিব জানান, বিশ্বকাপের পুরোটা সময় তিনি চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। মূলত স্ট্রেস থেকেই এমন সমস্যার উৎপত্তি উল্লেখ্য করে সাকিব আরও বলেন, বিশ্বকাপে কেবল এক কিংবা দুই ম্যাচের জন্য না, বরং পুরোটা বিশ্বকাপই আমি চোখের সমস্যায় ভুগেছি।
তাহলে সাকিব কি বিশ্বকাপে অনুমাননির্ভর ক্রিকেট খেলেছেন? এমন প্রশ্নে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার বলেন, এমনটা হতেই পারে। বল মোকাবেলা করতে আমার খুবই অস্বস্তি হতো।
এরপর সাকিব জানান, যখন আমি সেখানে (ভারতে) ডাক্তারের কাছে যাই, তখনও আমার কর্ণিয়া বা রেটিনায় পানি জমে ছিল। তারা আমাকে ড্রপ্স দিয়েছিল আর এও বলা হয়েছিল মানসিক চাপ কমাতে। আমি জানি না এটাই সমস্যার (চোখের দৃষ্টি কমে আসা) কারণ কিনা। কিন্তু যখন আমি আবার আমেরিকায় (বিশ্বকাপের পর) পরীক্ষা করাই, আমার কোনো চাপ ছিল না। আমি ডাক্তারকে বলেছিলাম, বিশ্বকাপ নেই। তাই চাপও নেই।
চিকিৎসাশাস্ত্রের বক্তব্য, কোন ব্যক্তি ব্যাপক পরিমাণ মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের মধ্যে থাকলে তার চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে। চোখ মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকায়, স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ চোখের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই হরমোনের নিঃসরণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। যাতে দৃষ্টিশক্তিতে বাঁধা দেখা দেয়।
সাকিব অবশ্য অতিরিক্ত চাপের অজুহাত হিসেবে অধিনায়কত্ব করতে রাজি নন তবে বলেছেন যে তিনি যদি আগে ওয়ানডে দল পেতেন তবে এটি তার জন্য আরও ভাল হত। তিনি বলেন, কারণ আমি অধিনায়কত্ব করেছি (আমি চাপের জন্য এটিকে অজুহাত হিসাবে রাখতে প্রস্তুত নই)। তবে আমি যদি এটি (অধিনায়ক) আগে পেতাম তবে এটি সহজ হত কারণ যদি আমার কাছে সময় থাকত তবে আমি সবকিছু প্রস্তুত করে সেখানে যেতে পারতাম।
সাকিব আরও বলেন, আমি (অধিনায়ক হিসাবে) যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম তা হল যে দলটি আমি যেভাবে ভাবছিলাম বা যে দর্শন দিয়ে আমি খেলতে চেয়েছিলাম সেভাবে প্রস্তুত ছিল না। আপনি যদি দেখেন শুধুমাত্র বিশ্বকাপের সময় নয়, ২০২৩ সালের মধ্যেও আমাদের ওয়ানডে পারফরম্যান্স ভাল ছিল না।
এদিকে, সাকিব জোর দিয়ে বলেছেন তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত নন। তিনি যোগ করেছেন যে রাজনীতিতে থাকা সত্ত্বেও বিসিবির সঙ্গে তার কোনো সমস্যা হবে না, যা রাজনীতিতে আসার পরে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজার ক্ষেত্রে হয়েছিল।
সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে সাকিব একবারই নিজের সেরাটা দেখাতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে অর্ধশতক পেরিয়ে শতকেরই কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক। তবে সেটাও পাওয়া হয়নি। ২০১৯ সালে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছিল ৬০৬ রান। বিপরীতে ২০২৩ বিশ্বকাপে করেছেন মোটে ১৮৬ রান।